সজীব আহমেদ

বেঙ্গল নিউজ টোয়েন্টিফোর


২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৫৩



ঢাকার বাসে ই-টিকিট, থামছে না যত্রতত্র

সজীব আহমেদ, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৫৩

ঢাকার বাসে ই-টিকিট, থামছে না যত্রতত্র

ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর গণপরিহনের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য ঠেকাতে চালু হয়েছে ‘ই-টিকিটিং সিস্টেম’। গত ২২ সেপ্টেম্বর ‘বসুমতি’, ‘প্রজাপতি’, ‘পরিস্থান’ ও ‘মিরপুর লিংক’ বাসে পরীক্ষামূলকভাবে এ ব্যবস্থা চালু হয়। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সব রুটেই এ ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নতুন এই ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট বাস স্ট্যান্ডে একটি ‘পজ’ মেশিন রয়েছে। এই মেশিনের মাধ্যমে যাত্রীরা গন্তব্য অনুযায়ী টিকিট কিনে বাসে উঠছেন। টিকিটের গায়ে যাত্রা শুরু ও শেষের স্থানের বিবরণ এবং টাকার পরিমাণ উল্লেখ থাকছে।

মিরপুরের পল্লবী থেকে খামারবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ‘মিরপুর লিংক’ গাড়িতে ওঠেন দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোরকে তিনি বলেন, ‘ই-টিকিটিং পদ্ধতিটি ভালো। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের বিড়ম্বনা কিছুটা দূর হয়েছে। তবে ছোট ছোট কিছু সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। যেমন, আমি যাব খামারবাড়ি। কিন্তু এই বাসে আগারগাঁও-তালতলার পরের স্টেশন ধরা আছে ধানমন্ডি ২৭। এখন খামারবাড়ি নামলেও আমাকে ধানমন্ডি ২৭-এর ভাড়া (২৭ টাকা) দিতে হবে। আর ২৭ টাকা তো দেওয়া যায় না; দিতে হবে ৩০ টাকা। যাই হোক, তারপরেও বলবো, নতুন উদ্যোগটি ভালো।’

‘মিরপুর লিংক’-এর টিকিট বিক্রেতা আবির বলেন, ‘ই-টিকিটিংয়ে সরকারের নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সুযোগ নেই। এতে ভাড়া নিয়ে দুর্ভোগ থাকবে না। তবে আগে যেমন যাত্রীরা যেখান থেকে খুশি বাসে উঠতেন, এখন আর সেই সুযোগ থাকছে না। সড়কের যেকোনো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে হাত উঠালেই বাস আর থামছে না। এতে কিছু কিছু যাত্রী বিড়ম্বনায় পড়ছেন। তবে আমার মনে হয়, নির্দিষ্ট স্টপেজে দাঁড়ানোর অভ্যাস সবারই করা উচিত।’

নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে চালক-হেলপারদের মাঝে। ঢাকার গাবতলী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তাগামী ‘বসুমতি’ বাসের চালক খোকন মিয়া বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘নতুন নিয়মটি ভালো। তবে শুরুর দিকে কিছু সমস্যা হচ্ছে। যাত্রী কমে গেছে। আমাদের আয়ও কমে গেছে। নতুন সিস্টেমে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে।’

আপনারা কি এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে এমন প্রশ্নের জবাবে খোকন মিয়া বলেন, ‘আমরা কোনো পদ্ধতিরই বিরুদ্ধে নই। তবে যেকোনো সিস্টেম প্রথমে চালু হলে সমস্যা মনে হয়। ধীরে ধীরে নতুন পদ্ধতির সঙ্গে সবাই খাপখাইয়ে নেয়। আমাদের দৈনিক একটা আয় ছিল। অনেকেই জানেন না, বাসের চালক-হেলপাররা কিন্তু একদিন পর পর কাজ পান। ফলে আমাদের আয় সম্পর্কে সবার যা ধারণা, প্রকৃত আয় তার অর্ধেক। ফলে যেকোনো নতুন পদ্ধতি চালু করার সময় আমাদের মতো শ্রমিকদের কথা মাথায় রাখা উচিত।’

মিরপুর ও আবদুল্লাহপুরের মধ্যে চলাচলকারী ‘পরিস্থান’ বাসের একজন মালিক আতিক রহমান। বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোরকে তিনি বলেন, ‘নতুন টিকিটিং সিস্টেম চালুর পর টাকা পাইনি। আয় কমে গেছে। তবে সমিতি জানিয়েছে, একটু ধৈর্য ধরলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এখন একটু অপেক্ষা করে দেখি।’

পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্যাহ বলেন, “রাজধানীতে পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহনে ই-টিকিটিং শুরু হয়েছে। সফল হলে রাজধানীর সব গণপরিবহনে পর্যায়ক্রমে এই ব্যবস্থা চালু করার ইচ্ছা আছে। ‘অছিম’, ‘রাজধানী’ ও ‘নূরে মক্কা’— এই তিনটি পরিবহন ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ই-টিকিটিংয়ে যুক্ত হবে। এ ছাড়া ধাপে ধাপে অন্যান্য কোম্পানি যুক্ত হবে।”

এসএ/ ডিএইচ/কেএ