ডেস্ক রিপোর্ট, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
২০ জানুয়ারি ২০২৫ ০২:২৮
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও সংবিধান সংস্কার বিষয়ক প্রস্তাবনার মাধ্যমে ৭২'র সংবিধান বাতিলের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী বিশিষ্টজনেরা।
মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা পক্ষের সংগঠন 'একাত্তরের প্রহরী'র ব্যানারে লিখিত বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান মুক্তিযোদ্ধা,
সমাজ চিন্তক, রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী, লেখক ও সংগঠকসহ আরও অরেকে।
বিবৃতিতে
তারা বলেন, গত ৫ই আগস্ট, ২০২৪ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই আমরা গভীর
পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ্য করছি বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ
ও বিতর্কিত করার হীন প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।
গেল সাড়ে
পাঁচ মাসে এই হীন প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় আমরা শোকাতুর হৃদয় নিয়ে দেখলাম মুক্তিযুদ্ধের
সকল ভাস্কর্য ভাঙা হলো, পুড়িয়ে দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর
বাড়ি। চরমভাবে অবমাননা করা হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য ,আঘাত
এলো জাতীয় সংগীতের উপর। ধ্বংস করা হলো মুক্তিযুদ্ধের যাদুঘর এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল
নথিপত্র, পাঠ্যবই পরিবর্তনের উছিলায় বিতর্কিত করা হলো মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা।
বীরাঙ্গনাদের সর্বোচ্চ ত্যাগকে অস্বীকার করতে গিয়ে অপমানিত করা হলো তাঁদের। আর সবশেষে
আমরা দেখলাম সম্প্রতি সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের নামে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে
অর্জিত বাহাত্তরের সংবিধানকে বাতিল করে দেবার সুগভীর ষড়যন্ত্র।
বিবৃতিতে
আরও বলা হয়, ১৯৭২ সালে রচিত এবং হস্তলিখিত সংবিধান মূলত বাঙালি জাতির এক ঐতিহাসিক দলিল।
দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমা এবং রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের
সবচেয়ে বড় অর্জন এই বাহাত্তরের সংবিধান। এই সংবিধানের মূল চারনীতি,শুধু মুক্তিযুদ্ধের
আদর্শকেই বয়ান করে না, বরং হাজার বছরের পলিমাটি অববাহিকায় একটু একটু গড়ে ওঠা অসাম্প্রদায়িক
প্রগতিশীল বাঙালি সংস্কৃতি- সমাজকেও ধ্রুব হিসেবে বর্ণনা করে। তাই নির্দ্বিধায় ৭২’র
সংবিধানকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম কাঠামোও বলা যায়।
কিন্তু আমরা
অবাক হয়ে দেখলাম, অতিসম্প্রতি, সংবিধান সংস্কার
কমিশনের সুপারিশের নামে সেই শিকড়েই আঘাত করা হয়েছে। লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, ৭২’র সংবিধানের
চার মূলনীতিকে মুছে ফেলার মাধ্যমে বাংলাদেশের চিরকালীন কাঠামোতেই মূলত সচেতনভাবে আঘাত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ধর্ম নিরপেক্ষতা, বাঙালি
জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত এবং সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সমবন্টনে অঙ্গিকারবদ্ধ যে বাংলাদেশের
জন্ম হয়েছিলো সেই বাংলাদেশের সকল সুরকে একতাবদ্ধ করেই রচিত হয়েছিলো আমাদের ৭২’র সংবিধান।
সংবিধান
সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংবিধানের চার মূলনীতির তিনটিকে মুছে দিয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধ
এবং বাংলাদেশের মূল চেতনায় কুঠারাঘাত করছেন।
আমরা ‘একাত্তরের
প্রহরীর’ পক্ষ থেকে এই হীন প্রচেষ্টার প্রতি তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ এবং অনাস্থা জানাই।
আমরা তীব্র নিন্দা জানাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ভাস্কর্য এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের অবমাননাসহ ইতিহাসকে বিতর্কিত করার ঘৃণ্য সকল প্রচেষ্টার প্রতি।
পরিশেষে
আমরা আহ্বান জানাই, ৭২’র সংবিধান সংস্কারের নামে সুপারিশকৃত সংশোধনগুলো বিবেচনায় না
নিয়ে ৭২’র সংবিধানকে অপরিবর্তিত রাখা হোক। আমাদের আহ্বান, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে
বিতর্কিত করার সকল হীন প্রচেষ্টা বন্ধ করা হোক আমাদের আহ্বান, একাত্তরে বাংলাদেশের
সকল মুক্তিকামী জনতার বলিদানকে স্মরণে রেখে বাংলাদেশকে পরিচালনা করা হোক। একই সাথে
সকল প্রকার নিপীড়ন অনতিবিলম্বে বন্ধ করা হোক।
লিখিত বক্তব্যে স্বাক্ষর করেন- ড: নুরুন নবী (মুক্তিযোদ্ধা), বেলাল বেগ (সমাজ চিন্তক), ড: জিনাত নবী (মুক্তিযোদ্ধা), তাজুল ইমাম (মুক্তিযোদ্ধা), ডঃ হাসান মামুন (অধ্যাপক), ডঃ নাহিদ বানু (বিজ্ঞানী), ডঃ দিলিপ নাথ (লেখক এবং মূলধারার রাজনীতিবিদ), রাফায়েত চৌধুরী (রাজনীতিবিদ), ড: দেলোয়ার আরিফ (অধ্যাপক), ড: কামরুন নাহার নীরু (অধ্যাপক), ফকির ইলিয়াস (কবি) , লুৎফুন নাহার লতা (লেখক, অভিনয় শিল্পী), মিথুন আহমেদ (সাংস্কৃতিক সংগঠক), মিনহাজ আহমেদ (লেখক এবং সংগঠক), এ্যানি ফেরদৌস (সাংস্কৃতিক সংগঠক), ডঃ বিলকিস রহমান দোলা (আবৃত্তিকার), জি, এইচ আরজু (সংগঠক, বাচিক শিল্পী), সিসিলিয়া মোরাল (সাংস্কৃতিক কর্মী), সাবিনা নীরু (বাচিক শিল্পী), তাহরিনা প্রীতি (বাচিক শিল্পী), স্বিকৃতি বড়ুয়া (সংগঠক), গোপাল স্যানাল (একটিভিস্ট), পিনাকী তালুকদার (সাংবাদিক), গোপন সাহা (বাচিক শিল্পী), আবু সাঈদ রতন ( লেখক, সংগঠক), ফারহানা ইলিয়াস তুলি (কবি) , স্বাধীন মজুমদার (বাচিক শিল্পী), খালেদ সরফুদ্দিন (লেখক, সংগঠক), মনজুর কাদের (ছড়াকার), রওশন আরা নীপা (সংগঠক, চলচ্চিত্র নির্মাতা), মিল্টন আহমেদ (নাট্যশিল্পী, সংগঠক), মিশুক সেলিম (লেখক, সংগঠক), আনোয়ার সেলিম (কবি, নাট্যশিল্পী), জয়তূর্য চৌধুরী ( অনলাইন একটিভিস্ট, সমাজকর্মী) এবং স্মৃতি ভদ্র (লেখক)।
/এসবি