নিজস্ব প্রতিবেদক

বেঙ্গল নিউজ টোয়েন্টিফোর


১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:০১



বাগমারার অন্ধকারটা ঘোচাতে পেরেছি: এনামুল হক

নিজস্ব প্রতিবেদক, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:০১

বাগমারার অন্ধকারটা ঘোচাতে পেরেছি: এনামুল হক

ছবি: সংগৃহীত

২০০১ সালের পর থেকে কয়েক বছর রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা ছিল চরমপন্থি রাজনীতির অভয়ারণ্য। হত্যা, খুন, ধর্ষণের এক রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়েছিল বাগমারা। আলোচিত জঙ্গি বাংলা ভাইয়ের উত্থানও হয়েছিল এ এলাকা ঘিরেই। একাধিকবার মানুষ হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখার নির্মম দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছেন বাগমারাবাসী। সেই সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলো সে বিষয়ে বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোরের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক। আলাপচারিতায় আরও উঠে এসেছে বাগমারার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থার নানা প্রসঙ্গ।

বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর: টানা তিন মেয়াদে রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালে প্রথমবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। এর আগে সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। দলীয় রাজনীতিতে কীভাবে সম্পৃক্ত হলেন?

এনামুল হক: আমি সরাসরি দলের রাজনীতিতে যুক্ত না থাকলেও সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমার পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পুরোনো। ২০০৮ সালে বাগমারাতে একটি বিশেষ পরিস্থিতির কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতি আমাকে দলের মনোনয়ন দেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে সাদরে গ্রহণ করেন। এ ছাড়া আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাগমারার হাজার হাজার মানুষ সম্পৃক্ত। আমার জ্ঞাতি গোষ্ঠীও অনেক বড়। সব মিলিয়ে নির্বাচনে জয় পেতে বিশেষ কোনো অসুবিধা হয়নি।

বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর: নির্বাচিত হওয়ার পরে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে?

এনামুল হক: বাগমারা ছিল সন্ত্রাসের এক রক্তাক্ত জনপদ। একদিকে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, অন্যদিকে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন। এগুলো নিয়ে অনেক ভেবে কাজ করতে হয়েছে। তবে আমি দেখেছি যে, বাগমারার মানুষ আসলে সহজ-সরল। বাগমারায় বাংলা ভাই বা সর্বহারা এগুলো কিন্তু সবই আমদানি করা। বাইরে থেকে এসে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় স্থানীয়দের ব্যবহার করে বাগমারাতে এসব সন্ত্রাস করেছে।

বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর: তিন দফায় সংসদ সদস্য হয়ে বাগমারার মানুষের জন্য কী কী উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন?

এনামুল হক: বাগমারা উপজেলার অবস্থান শহর থেকে বেশ দূরে। নওগাঁ থেকে ৬০ কিলোমিটার, রাজশাহী থেকে ৫০ কিলোমিটার, নাটোর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। উপজেলাটা অনেক বড়, একটা জেলার মতো। আয়তনে ৪০০ বর্গকিলোমিটার, চার লাখ মানুষের বাস। অধিকাংশ ইউনিয়নে বিদ্যুৎ ছিল না, পাকা রাস্তা ছিল না। আমরা সব গ্রামকে ইউনিয়নের সঙ্গে, ইউনিয়নগুলোকে উপজেলার সঙ্গে, পাকা রাস্তার যোগাযোগ তৈরি করি। বাগমারায় ১০০ ভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। প্রাইমারি স্কুল আছে ২২০টি, তার মধ্যে প্রায় অধিকাংশ স্কুলের ভবন ছিল না। সেগুলো আমরা করেছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১০০-এর বেশি ভবন করে দিয়েছি। মাধ্যমিক স্কুল আছে ৯০টি। তার মধ্যে আমরা প্রায় ৪০টি স্কুলের ভবন করে দিয়েছি। মাদ্রাসা আছে ৫২টি। তার মধ্যে আমরা ২০টির ভবন করে দিয়েছি। কলেজ আছে ২১টি, তার মধ্যে ভবন করে দিযেছি ১২টির। এভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা মানসম্মত করে গড়ে তুলেছি।

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় কৃষি, ভর্তুকি বা বয়স্ক ভাতা, দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করেছি। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হয়েছে। বাগমারা কৃষিপ্রধান এলাকা। এখানে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুতায়নের ফলে কৃষি উৎপাদন দ্বিগুণ, তিন গুণ হয়ে গেছে। যার ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়েছে।

আমি আনন্দিত যে, আমার এলাকায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসেছেন। মন্ত্রিপরিষদের প্রায় সব সদস্য আমার এলাকায় এসেছেন। উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে বাগমারায় যে অন্ধকার ছিল, সেই অন্ধকারটাকে ঘুচিয়েছি। বাগমারায় বিএনপি-জামায়াত ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাই, সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। সেই বাগমারা ছিল বাংলাদেশের জন্য বোঝা। এখন আমরা সেটাকে সম্পদে পরিণত করেছি। সেটাই আমার বড় অর্জন বলে মনে করি।

বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর: আপনি এখন বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে পেরেছেন?

এনামুল হক: বাগমারা আওয়ামী লীগ এখন একটি শক্ত ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে গেছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীদের তথ্য ডিজিটালাইজড করেছি। প্রাথমিক সদস্যদের বিস্তারিত তথ্যও আমাদের কাছে আছে। সারা দেশে আর কোনো উপজেলায় নেতাকর্মীদের সবার তথ্য এভাবে সংরক্ষণ করা আছে কিনা সন্দেহ।

বাগমারায় বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স করেছি। এই কমপ্লেক্সে আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যালয় করে দিয়েছি। এখানে বড় পাঠাগার আছে। সভা-সেমিনার করার জন্য আছে আধুনিক মিলনায়তন। ফলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহ বেড়েছে। বাগমারা একসময় কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের আসন ছিল। এখন এটা ইনশাল্লাহ আওয়ামী লীগের আসন, নৌকার আসন।

মানুষের মনোজগতে পরিবর্তনের জন্যও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর এবং লাইব্রেরি করার ফলে নতুন প্রজন্ম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সেখানে প্রতিদিন আসছে। পড়ালেখার মধ্যে দিয়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটা আমূল পরিবর্তন এসেছে। গত ১৫ বছরে এখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা, রাজনৈতিক হানাহানি, রক্তপাত হয়নি।

বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর: উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাগমারার নতুন প্রজন্মকে কীভাবে প্রস্তুত করছেন?

এনামুল হক: ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য তাদের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে একটা ওরিয়েন্টেশন কোর্স করাই। যেমন : শিক্ষার্থীরা এসএসসি পাস করার পরে একটা কোর্স করে, ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরে একটা কোর্স করে এবং বিসিএস দেওয়ার জন্য একটা কোর্স করে। যার ফলে প্রতিবছর এখান থেকে ১০ থেকে ১২ জন বিসিএস কোয়ালিফাই হয়। এ পর্যন্ত আমার হাতেই কমপক্ষে ২০০ বিসিএস ক্যাডার তৈরি হয়েছে বাগমারা থেকে। তারা এখন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চাকরি করছে। কেউ ইউএনও কেউ এসিল্যান্ড হয়েছে।

তো মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য আগামী দিনে বাগমারা একটা মডেল হয়ে উঠবে। টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) স্থাপনে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। সম্প্রতি কোরিয়ান একটা কম্পানির সহায়তায় আমরা একটা ট্রেনিং সেন্টার চালুর আলোচনা চূড়ান্ত করেছি। এখানে ওয়েল্ডার ট্রেনিং করিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব।

বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর: আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এনামুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।

/এইচআই